ওটিটিস মিডিয়া

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র | | NCTB BOOK

ওটিটিস মিডিয়া (Otitis media): মধ্যকর্ণের সংক্রমণ কানের ভেতরে বা বাইরে যে কোন অংশে সংক্রমণজনিত প্রদাহকে ওটিটিস (otitis) বলে। কানের মধ্যকর্ণে সংক্রমণজনিত প্রদাহকে বলা হয় ওটিটিস মিডিয়া) (otitis media/middle car infection)। গলবিলের মধ্যকর্ণের সংযোগ স্থাপনকারী ইউস্টেশিয়ান নালি (custachian tube) টি অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে, শুধু ঢোকগেলার সময় খোলা থাকে কোনো কারণে কোনো জীবাণু এ নালি দিয়ে এসে মধ্যকর্ণে প্রদাহ সৃষ্টি করলে তাকে ওটিটিস মিডিয়া বলে। বয়স্কদের তুলনায় শিশুরা এরোগে বেশি আক্রান্ত হয়। স্থায়িত্বের ভিত্তিতে ওটিটিস মিডিয়া দুরকম হতে পারে : 
(১) স্বল্পস্থায়ী বা অ্যাকিউট (acute otitis media) ও (২) দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক (chronic otitismedia)। এ দুধরনের কর্ণপ্রদাহকে যথাক্রমে তীব্র কর্ণপ্রদাহ ও তরল জমাট কর্ণপ্রদাহ।


রোগের কারণঃ যদি কোনো কারণে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক গলবিলে অবস্থান করে তখন এসব জীবাণু ইউস্টেশিয়ান নালির মাধ্যমে মধ্যকর্ণে প্রবেশ করে এবং সেখানে সংক্রমণ ঘটায়। ভাইরাসের মধ্যে Respiratory syncytial virus এবং ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে Streptococcus pneumoniae, Haemophilus influenzae, Moraxella catarrhalis অধিক সংক্রমণ ঘটায়। সংক্রমণের কর্ণপটহ ফলে মধ্যকর্ণে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে প্রদাহ হতে পারে। প্রদাহ হওয়ার জন্য জলীয় ও ইউস্টেশিয়ান নালি মিউকাস দিয়ে কান ভরাট হয় এবং ঐ কানে অধিক চাপ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে মধ্যকর্ণে ব্যাকটেরিয়ার সক্রিয় সংক্রমণে টিমপেনিক পর্দায় (কর্ণপটহ) ক্ষত হয়ে ছিদ্র হতে পারে এবং প্রচুর পরিমাণে ঘন পুঁজ সৃষ্টি হয়ে বহিকর্ণদিয়ে গড়িয়ে কানের বাইরে আসতে পারে। একে অটরিয়া (otorrhea) বলে।

ওটিটিস মিডিয়ার লক্ষনঃ ওটিটিস মিডিয়া হচ্ছে বিশেষ করে শিশুদের শ্বাসনালির উপরের অংশে সংক্রমণজনিত একটি অসুখ। বিভিন্ন ধরনের ওটিটিস মিডিয়া থাকলেও পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য সামান্যই। তাই নিচে সব ধরনের ওটিটিস মিডিয়ার লক্ষণগুলোকে সম্মিলিতভাবে উল্লেখ করা হলো । কান চুলকান ও জোরে কান টানা; অতিরিক্ত কান্নাকাটি; লোকজনকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা; ঘুমে ব্যাঘাত; ১০০.৪°F -এর বেশি দেহতাপসহ জ্বর; প্রচন্ড মাথা ব্যথা; ক্ষুধামান্দ্য, কাশি ও নাক দিয়ে পানি ঝরা; কান ব্যথা ও কানে চাপ অনুভব করা; কান ভোঁ ভোঁ করা বা গুন-গুন ধ্বনি শোনা; বমি বা ডায়ারিয়া; কানের পর্দা ফেটে গেলে পিনা (বহিঃকর্ণ) গড়িয়ে তরল পদার্থ (রক্ত বা পুঁজ) নির্গমন; দেহের ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা; এবং শ্রবণ সমস্যা (শ্রবণশক্তি হ্রাস থেকে বধিরতা)।

ওটিটিস মিডিয়ার প্রতিকারঃ ওটিটিস মিডিয়া যেহেতু শিশুদের অসুখ হিসেবে পরিচিত তাই দেশের ভবিষ্যৎ বংশধরদের নিরোগ দেহ কামনায় উরীব থাকাটাই স্বাভাবিক। এ রোগে আক্রান্ত হলে নিচে উল্লেখিত পরামর্শ মেনে চলা একান্ত দরকার। ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে (নিজের ক্ষেত্রে) বা শিশুকে অন্যের ধূমপানের আওতামুক্ত রাখতে হবে; বায়ু দূষণ থেকে দূরে থাকতে হবে; নিজেকে ও শিশুকে অনাক্রম্য করে রাখতে হবে; এক বছর বা তারও বেশি (সম্ভব হলে) কাল পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে; বোতলে দুধ খাওয়াতে হলে শিশুকে উলম্ব অবস্থায় খাওয়াতে হবে; কানের পাশে সেঁক দিতে হবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথা ও জীবাণুনাশক (অ্যান্টিবায়োটিক) ওষুধ বা কানের ড্রপ ব্যবহার করতে হবে; যারা ঘনঘন এ অসুখে আক্রান্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা টিমপেনোস্টোমি টিউব (tympanostomy tube) নামে বিশেষ নালির সাহায্যে বিশেষ চিকিৎসা করে থাকেন ।

Content added By
Promotion